Fact About Charlie Chaplin

চার্লি চ্যাপলিন সম্পর্কে অজানা তথ্য, মৃত দেহ চুরি হয়ে যায় কবরস্থান থেকে

মুখ দিয়ে একটি কথা না বলে হাসিয়ে গেছেন হাজার হাজার মানুষকে। সমাজের কষ্টের দিকগুলো যেগুলো নিয়ে কেউ কথা বলতে চায় না সেগুলোকে তিনি খুবই সাবলীলভাবে হাসির মাধ্যমে তুলে ধরেছিলেন। যার সিনেমা ১০০ বছর পরেও আমাদের মন জয় করে নেয় আমরা আজকে কথা বলব বিশ্বের অন্যতম একজন সেরা অভিনেতা চার্লি চ্যাপলিন এর সম্পর্কে। যার নাম শুনলে ছোট গোঁফ আর মাথায় কালো টুপি পরা চরিত্রটির কথা মনে পড়ে যায়। যার সাথে আমাদের অনেক আবেগ এবং স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। চার্লি চ্যাপলিন তার অভিনয় দিয়ে বিশ্বজুড়ে খেতি পেয়েছিলেন। কিন্তু আপনি জানলে অবাক হবেন তিনি যে অস্কার প্রাইজগুলো পেয়েছেন তার মধ্যে একটিও তিনি তার অভিনয়ের জন্য পাননি। তার জীবনের শুরুটা মোটেও সহজ ছিল না। – Fact About Charlie Chaplin

ছোটবেলায় যে কি পরিমান দারিদ্রতার মধ্যে তিনি ছিলেন তা খুব কম মানুষই জানে। বাবার ভালোবাসা থেকে তিনি বঞ্চিত হয়েছিলেন। মাত্র 5 বছর বয়স থেকে রোজগারের পথ বেছে নিতে হয়েছিল তাকে। সারা জীবন তিনি তার কষ্ট দুঃখকে হাসির মধ্যে আড়াল করে রেখেছিলেন। অভিনয় জগতে তিনি বিশ্ব বিখ্যাত হলেও একটা সময় যে আমেরিকা থেকে তিনি প্রচুর পরিমাণে খ্যাতি পেয়েছিলেন সেই আমেরিকায় তাকে একবার মিথ্যা অপবাদ দিয়ে দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল। এমনকি তার মৃত্যুর পরে তার মৃতদেহ লোপাট করার চেষ্টা করা হয়েছিল। এবার প্রশ্ন হল কিভাবে তিনি তার দারিদ্রতা থেকে বেরিয়ে এসে একজন সফল অভিনেতা হয়েছিলেন।

১৬ই এপ্রিল 1889 সালে ইংল্যান্ডের লন্ডনে চার্লি চ্যাপলিন জন্মগ্রহণ করেন। চার্লি চ্যাপলিন এডলফ হিটলার এর থেকে মাত্র চার দিনের বড় ছিলেন। মানে তার জন্ম চার দিন পরে হিটলার জন্মগ্রহণ করেন। চার্লি চ্যাপলিন এর বাবা চার্জ চ্যাপলিন এবং মা হেনা হিল দুজনেই রোজগারের জন্য স্টেজ পারফর্ম করতেন। তবে তাদের পরিবারের খুবই দরিদ্রতা ছিল। চার্লি চ্যাপলিন এর একজন ভাইও ছিল। ভাইয়ের নাম ছিল সিডনি চ্যাপলিন। চার্লি চ্যাপলিন এর জন্মানোর সময় থেকেই তার বাবা-মায়ের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়। তাদের মধ্যে নিয়মিত ঝগড়া হতো। এবং চার্লিবাবা চার্লস চ্যাপলিন মদ খেয়ে তার মাকে মারধর করতো।

যখন চার্জে বয়স ছিল মাত্র দু’বছর তখন ১৮৯১ সালে তার বাবা তাদের সবাইকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। এ সময় চার্লি চ্যাপলিন তার মা এবং ভাই সিডনি কে পথে রাত কাটাতে হয়েছিল। তাদের কাছে থাকার জন্য ঘর ছিল না। নেশার মতো থাকা চার্লি বাবা তাদের কোন অর্থ দিয়েও সাহায্য করেনি। প্রচন্ড অভাবে দুই সন্তানকে নিয়ে চার্লির মা হেনা হিলস দিন কাটাতে থাকেন। তিনি রোজগারের জন্য স্টেজে গান গাইতেন। কিন্তু দিন দিন তিনি ডিপ্রেশনে ভুগতে থাকেন। এ সময় ঠিকঠাক ভাবে ঘর ভাড়া দিতে না পারার জন্য তাকে বহু ফ্ল্যাট বদল করতে হয়েছিল। চার্লি যখন 5 বছর বয়স তখন তার মা হেনাহেল একদিন স্টেজে পারফর্ম করছিলেন কিন্তু এই পারফর্ম করার সময় তিনি হঠাৎ করে গলার আওয়াজ হারিয়ে ফেলেন এ সময় অডিয়েন্স এর মধ্যে বসে ছিলেন চার্লি চ্যাপলিন।

এদিকে গান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অডিয়েন্সরা খুবই ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। আর আজেবাজে মন্তব্য করতে থাকে। ঢিল ছুড়তে থাকে। চার্লির এ বিষয়গুলো দেখে খুবই খারাপ লাগছিল। তখন চার্লি নিজেই স্টেজে উঠে যায় এবং গান গাইতে থাকে। মাত্র 5 বছরের একটি বাচ্চাকে এত সুন্দর গান গাইতে দেখে দর্শকরা হতবাক হয়ে যায়। আর সেদিন চার্লির গানের শেষে অডিয়েন্সরা দাঁড়িয়ে হাততালি দিতে থাকে। এটা ছিল চার্লির জীবনের প্রথম স্টেজ শো। দিন দিন চার্লি চ্যাপলিন এর মা ডিপ্রেশনে ঘুরতে থাকে। এবং একটা সময় তিনি মানসিক রোগীতে পরিবর্তিত হয়। সেই সময় তার মাকে এসাইলাম এ পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এই সময়টা চার্লি জীবনের সবথেকে খারাপ সময় ছিল। তা মায়ের রোজগার বন্ধ হয়ে যায়। কোর্ট থেকে তখন ছাড়লি এবং তার ভাই সিডনি চ্যাপলিন কে তার বাবার কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

কারণ তার বাবা মায়ের মত সম্পর্ক না থাকলেও তারা তখনও ডিভোর্স দেয়নি। চার্লির বয়স যখন মাত্র দু’বছর ছিল তখন তার বাবা তাদেরকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন। তারপরে সে আর কখনো তার বাবার সাথে দেখা করেনি। ফলে চার্লি জানতো না বাবার ভালোবাসা কি। চার্লি আর সিডনি মনে অনেক আশা নিয়ে তার বাবার কাছে থাকতে এসেছিল। কিন্তু ততদিনে তার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন। আর তিনি সারাদিন নেশায় মত্ত থাকতেন। অন্যদিকে চার্লি সৎ মা তাদের দুই ভাইয়ের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখত না। একটু ভুলে তাদের কপালে জুতো বড় বড় শাস্তি। আর এইভাবে বেশ কয়েক বছর চলতে থাকে। ১৯০১ সালে চার্লি আরো কিছু সমস্যার সম্মুখীন হয়।

তার বাবা ১৯০১ সালে মারা যান। ফলে তাদের থাকার জায়গাটাও চলে যায়। এ সময় চার্লি এবং তার ভাই সিডনি একটি অনাথ আশ্রমে থাকতে শুরু করেছিলেন। মাত্র ১৩ বছর বয়সে তাকে পড়ালেখা ছেড়ে দিতে হয়েছিল। তবে তার মধ্যে ছোটবেলা থেকেই অভিনয় এবং স্টেজে পারফরম্যান্স করার অনেক আকাঙ্ক্ষা ছিল। সেই প্রতিভা কে তিনি দিন দিন আরও রপ্ত করেছিলেন। জীবনে তিনি কখনো হার মানতে শেখেননি। যখন স্টেজ শো থাকতো না তখন তিনি সেই সময় সার্কাসে কাজ করতেন। এছাড়া রোজগারের জন্য সে সময় তিনি বিভিন্ন ছোটখাট কাজে জড়িয়ে ছিলেন। বিভিন্ন স্টেজে ছোটখাটো পারফর্ম করতে থাকেন চার্লি চ্যাপলিন।

১৯০৬ সালে একটি প্রোডাকশন হাউসে কাজ করে তিনি অভিনেতা হিসেবে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। এভাবেই শুরু হয় তার ক্যারিয়ারের উর্ধ্বমুখী সাফল্য। ১৯১৬ সালে চার্লি চ্যাপলিন তখনকার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট এর থেকেও বেশি ইনকাম করতেন বাৎসরিকভাবে। চার্লি চ্যাপলিন এর একজন বড় ফ্যান ছিলেন আলবার্ট আইনস্টাইন। তাদের মধ্যে খুবই সুন্দর একটি সম্পর্ক ছিল। ১৯৭২ সালে চার্লি চ্যাপলিন কে সম্মানীয় একাডেমি অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। যাকে আমরা অস্কার নামে জানি।

১৯৭৭ সালে ২৫ শে ডিসেম্বর যখন সভায় ক্রিসমাস এর পার্টি করছিল এই সময় সবাইকে হাসিয়ে যাওয়া চার্লি চ্যাপলিন হার্ট অ্যাটাক করে মারা যান। মৃত্যুর মাত্র এক বছরের মধ্যেই তার মৃত দেহ চুরি হয়ে যায় তার কবরস্থান থেকে। তারপর যখন সেই দুষ্কৃতির কারীদের ধরা হয় তখন তারা জানায় যে তারা চার্লির পরিবারের কাছ থেকে এই মৃতদেহের পরিবর্তে কিছু টাকা হাতে নেয়ার চেষ্টা করেছিল। চার্লির মৃতদেহ পরে আবার সেই একই কবরস্থানে রেখে দেয়া হয়। এবং তখন তার মৃতদেহ টিকে কংক্রিটের আস্তরণ দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। যাতে এমন ঘটনা আর কখনো না হয়।

আরো দেখুনঃ 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top