Facts About Uranium

ইউরেনিয়াম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেখুন A – Z

স্বর্ণের চেয়েও মূল্যবান পৃথিবীর সবচেয়ে দামি পদার্থ হিসেবে ধরা হয় ইউরেনিয়ামকে। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান জ্বালানি হচ্ছে ইউরেনিয়াম। শুধুমাত্র এক গ্রাম ইউরেনিয়াম পুড়িয়ে বিশ বিলিয়ন ক্যালোরি পরিমাণ শক্তি পাওয়া যায়। তাছাড়া দুই মিলিয়ন গ্রাম তেল অথবা ৩ মিলিয়ন গ্রাম কয়লা পুড়িয়ে যে শক্তি পাওয়া যায় এক গ্রাম ইউরেনিয়াম পুড়িয়েই তাই পাওয়া যায়। দেখা গেছে ৪৫০০ টন উচ্চ গ্রেড এর কয়লা থেকে যে পরিমাণ শক্তি পাওয়া যায় সেই একই পরিমাণ শক্তি মাত্র এক কেজি ইউরেনিয়াম থেকে পাওয়া যায়।-Facts About Uranium

ইউরেনিয়াম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য

ইউরেনিয়াম একটি তেজস্ক্রিয় ধাতু ও উচ্চ ঘনত্বের মৌল। যা ১৭৮৯ সালে বিজ্ঞানী হার্টিন আবিষ্কার করেছিলেন। ধারণা করা হয় যে তখন কার সবচেয়ে সাম্প্রতিক ঘটনা ছিল ইউরেনাস গ্রহের আবিষ্কার। এবং তিনি তখন এই ইউরেনাস গ্রহের না মানুসারেই তার আবিষ্কৃত মৌলের নাম রেখেছিলেন ইউরেনিয়াম। ১৮৯৬ সালে বিজ্ঞানী হেনরি সর্বপ্রথম ইউরেনিয়াম এর তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কার করেন। সামরিক ক্ষেত্রে ইউরেনিয়াম এর ব্যবহার সর্বাধিক। গোলাবারদ এর ভেদন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে এর ব্যবহার করা হয়। বৃদ্ধি পায় অস্ত্রের ধ্বংস ক্ষমতা।

গোলাবারুদের মধ্যে ইউরেনিয়াম ব্যবহারের মাধ্যমে ট্যাংকের মতো শক্তিশালী যুদ্ধজাহানকেও ধ্বংস করা সম্ভব। সামরিক ক্ষেত্রে ইউরেনিয়াম ব্যবহারের ফলে তেজস্ক্রিয়তা থেকেও বেশি ভয় হল রাসায়নিক বিষক্রিয়া। বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারমাণবিক চুল্লির জন্য ইউরেনিয়াম ধাতুটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। পনেরশো টন কয়লা থেকে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব তার সমান বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য মাত্র এক কেজি ইউরেনিয়াম ই যথেষ্ট। এরেনিয়াম থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে কল কারখানা চালনা সহ নগর বন্দর আলোকিত করা হয়।

তবে ইউরেনিয়াম এর তেজস্ক্রিয়তা যেকোনো প্রাণীর জন্যই ক্ষতিকর। পারমাণবিক অস্ত্র ছাড়াও ইউরেনিয়াম এর খনি ও কারখানা য় কাজ করার মাধ্যমে যে কেউ ইউরেনিয়াম এর তেজস্ক্রিয়তার সংস্পর্শে আসতে পারে। এই ধাতুর তেজস্ক্রিয়তার মাধ্যমে মানুষের কিডনি মস্তিষ্ক যকৃত হৃৎপিণ্ড সহ শরীরের অন্যান্য অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। দীর্ঘ সময় ইউরেনিয়ামের তেজস্ক্রিয়তার কারণে ক্যান্সার হয়ে থাকে। ইউরেনিয়াম রূপালী ধূসর বর্ণের একটি তেজস্ক্রিয় ধাতু।

U প্রতীকের এই ধাতুটি পর্যায় সারণির সপ্তম পর্যায়ে তৃতীয় শ্রেণীর বি উপ শ্রেণীতে উপস্থিত এবং সারণির ৯২ তম মৌল। উচ্চ ঘনত্বের ইউরেনিয়াম মৌলটি লেড থেকে ৭০ শতাংশ বেশি ঘনত্বের। এর ইউরেনিয়াম -২৩৫ এবং ইউরেনিয়াম -২৩৮ নামের দুটি আইসোটোপ রয়েছে। ২০১৫ সালের হেসে অনুযায়ী সর্ববৃহৎ ইউরেনিয়াম উৎপাদনকারী দেশ কাজাকিস্তান। এরপর এই রয়েছে কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়া। ইউরেনিয়াম খুবই দামী একটি ধাতু। পারমাণবিক অস্ত্র বানানোর ক্ষেত্রে এই ধাতু একটি অপরিহার্য উপাদান।

ইউরেনিয়াম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য

পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয় ইউরেনিয়াম -২৩৫। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলার সময় জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে “লিটল বয়” ও “ফ্যাটম্যান”নামে যে দুটি বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছিল ওই দুটি বোমায় ইউরেনিয়াম ব্যবহার করা হয়েছিল। আসার খবর হল বাংলাদেশের মাটিতে উন্নত মানের ইউরেনিয়াম এর সন্ধান পাওয়া গেছে। বলা যায় প্রকৃতি আমাদের করুণা করেছে। এই দুষ্প্রাপোর রাসায়নিক পদার্থটি অবহেলায় পড়ে রয়েছে দেশের বিভিন্ন নদীর বালুকণার সাথে। এখন শুধু আহরণ করতে পারলেই হলো।

রাতারাতি আমাদের ভাগ্যটা বদলে যাবে। কারণ বিশ্ববাজারে ইউরেনিয়াম এর দাম যেমনি চরা তেমনি রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। বিশেষ করে জার্মান জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ইউরেনিয়াম এর চাহিদা বলে শেষ করার মত নয়। এছাড়া বিশ্বের অনেক দেশেই ইউরেনিয়াম সংগ্রহ নিয়ে কূটো কৌশল চলছে। সূত্র মতে বাংলাদেশের সর্বপ্রথম হাজার ১৯৭৫ সালে ইউরেনিয়াম এর সন্ধান মিলে হাড়গাছা পাহাড় এ।

পাহাড়টি মৌলভীবাজার জেলার জুড়ি উপজেলার ফুলতলা ও সাগর নালা ইউনিয়ন এর মধ্যবর্তী স্থান এ অবস্থিত। সেই সময় দেশের আণবিক শক্তি কমিশনের একটি দল হাড়গাছা পাহাড়ে অনুসন্ধান চালিয়ে নিশ্চিত হয় ইউরেনিয়াম প্রাপ্তির বিষয়টি। তখন থেকে হাড়গাছা পাহাড় কে তেজস্ক্রিয় অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করে বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশন।

ইউরেনিয়াম নিয়ে সর্বাধিক জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন এবং উত্তর

1 Kg ইউরেনিয়ামের দাম কত

  • ১ কেজি ইউরেনিয়ামের দাম প্রায় ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশে, ১ কেজি ইউরেনিয়ামের দাম প্রায় ৫৫ কোটি টাকা।

  1 গ্রাম ইউরেনিয়াম এর দাম কত

  • ১ গ্রাম ইউরেনিয়ামের দাম প্রায় ১০০০ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশে, ১ গ্রাম ইউরেনিয়ামের দাম প্রায় ৫৫০০০ টাকা।

ইউরেনিয়াম চেনার উপায়

  • রঙ এবং আকার: ইউরেনিয়াম একটি ধাতব পদার্থ যা প্রায়শই রূপালী-সাদা বা হলুদ রঙের হয়। এটি একটি শক্ত এবং টেকসই পদার্থ যা সহজে ভাঙা যায় না।
  • তেজস্ক্রিয়তা: ইউরেনিয়াম একটি তেজস্ক্রিয় পদার্থ, যার অর্থ এটি ক্ষুদ্র পরিমাণে বিকিরণ নির্গত করে। এই বিকিরণ একটি গ্যালভানোমিটার বা তেজস্ক্রিয়তা সনাক্তকারীর মতো যন্ত্র দ্বারা সনাক্ত করা যেতে পারে।
  • রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য: ইউরেনিয়াম একটি রাসায়নিকভাবে সক্রিয় পদার্থ যা বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। এই বিক্রিয়াগুলির ফলে বিভিন্ন রঙের পদার্থ তৈরি হতে পারে, যা ইউরেনিয়াম সনাক্ত করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।

ইউরেনিয়াম এর ছবি

ইউরেনিয়াম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য

ইউরেনিয়াম কি ?

  • ইউরেনিয়াম একটি মৌলিক পদার্থ যা ৯২টি প্রোটন এবং ৯২টি ইলেকট্রনযুক্ত একটি ধাতু। এটি একটি তেজস্ক্রিয় পদার্থ যা পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন এবং সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়।  ইউরেনিয়াম হল একটি তেজস্ক্রিয় ধাতু যা পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন এবং সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়।

ইউরেনিয়াম কি বাংলাদেশে আছে

  • হ্যাঁ, বাংলাদেশে ইউরেনিয়াম আছে। ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশে ইউরেনিয়ামের সন্ধান পাওয়া যায়। সিলেট জেলার জৈন্তা এবং মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার ফুলতলা ও সাগরনাল এলাকায় ইউরেনিয়ামের আকরিক পাওয়া যায়।

ইউরেনিয়াম কোথায় পাওয়া যায়

  • ইউরেনিয়াম পৃথিবীর ভূত্বক এবং মহাসাগরীয় জলে পাওয়া যায়।ইউরেনিয়ামের প্রধান উৎস হল ইউরেনিয়াম আকরিক, যা সাধারণত গাঢ় রঙের শিলা বা খনিজের আকারে পাওয়া যায়। ইউরেনিয়াম আকরিক থেকে ইউরেনিয়ামকে উত্তোলন করা হয় এবং তারপর পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন বা অন্যান্য উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়। ইউরেনিয়ামের প্রধান উৎপাদনকারী দেশগুলি হল কাজাখস্তান, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিজার, নামিবিয়া এবং রাশিয়া। বাংলাদেশেও ইউরেনিয়াম পাওয়া যায়।

ইউরেনিয়াম এর সংকেত

  • ইউরেনিয়ামের রাসায়নিক প্রতীক হল U। এটি পর্যায় সারণীর অ্যাক্টিনাইড সিরিজের একটি মৌলিক পদার্থ যা ৯২টি প্রোটন এবং ৯২টি ইলেকট্রনযুক্ত একটি ধাতু।
  • ইউরেনিয়াম একটি তেজস্ক্রিয় পদার্থ, যার অর্থ এটি ক্ষুদ্র পরিমাণে বিকিরণ নির্গত করে। ইউরেনিয়াম পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন, সামরিক উদ্দেশ্যে এবং বিভিন্ন শিল্প অ্যাপ্লিকেশনে ব্যবহৃত হয়।

ইউরেনিয়াম দেখতে কেমন

  • ইউরেনিয়াম একটি রূপালী-ধূসর বর্ণের ধাতু। এটি একটি শক্ত এবং টেকসই পদার্থ যা সহজে ভাঙা যায় না। ইউরেনিয়াম একটি তেজস্ক্রিয় পদার্থ, যার অর্থ এটি ক্ষুদ্র পরিমাণে বিকিরণ নির্গত করে।

    ইউরেনিয়াম সাধারণত খাঁটি আকারে পাওয়া যায় না। এটি সাধারণত ইউরেনিয়াম আকরিকের আকারে পাওয়া যায়, যা একটি গাঢ় রঙের শিলা বা খনিজের আকারে থাকে। ইউরেনিয়াম আকরিক থেকে ইউরেনিয়ামকে উত্তোলন করা হয় এবং তারপর পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন বা অন্যান্য উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়।

    সংক্ষিপ্ত উত্তর:

    ইউরেনিয়াম একটি রূপালী-ধূসর বর্ণের ধাতু যা সাধারণত ইউরেনিয়াম আকরিকের আকারে পাওয়া যায়।

প্রকৃতিতে ইউরেনিয়াম এর পরিমাণ কত

  • প্রকৃতিতে ইউরেনিয়ামের পরিমাণ খুবই কম। পৃথিবীর ভূত্বকে ইউরেনিয়ামের গড় ঘনত্ব প্রতি টন পাথরের জন্য ১০-৫ থেকে ১০-৬ গ্রাম। অর্থাৎ, প্রতি ১০০ টন পাথরে মাত্র ১ গ্রাম ইউরেনিয়াম থাকে।
  • আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (IAEA) মতে, পৃথিবীতে মোট ইউরেনিয়ামের মজুদ প্রায় ১০০ মিলিয়ন টন। এর মধ্যে মাত্র ১% উত্তোলনযোগ্য।
  • ইউরেনিয়ামের প্রধান উৎপাদনকারী দেশগুলি হল কাজাখস্তান, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিজার, নামিবিয়া এবং রাশিয়া। বাংলাদেশও ইউরেনিয়াম পাওয়া যায়।

ইউরেনিয়ামের অর্ধায়ু কত বছর

  • প্রাকৃতিকভাবে ঘটে যাওয়া ইউরেনিয়ামের দুটি প্রধান আইসোটোপ রয়েছে: ইউরেনিয়াম-২৩৮ এবং ইউরেনিয়াম-২৩৫। ইউরেনিয়াম-২৩৮ এর অর্ধায়ু ৪.৫ বিলিয়ন বছর, যা পৃথিবীর বয়সের চেয়েও বেশি। ইউরেনিয়াম-২৩৫ এর অর্ধায়ু ৭০৪ মিলিয়ন বছর।
  • ইউরেনিয়ামের অর্ধায়ু হল সেই সময়ের ব্যবধান যার মধ্যে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ইউরেনিয়ামটির অর্ধেক পরিমাণে পরিণত হয়। অর্থাৎ, যদি কোনও নির্দিষ্ট সময়ে ১০০ গ্রাম ইউরেনিয়াম থাকে, তাহলে অর্ধায়ুর পরে ৫০ গ্রাম ইউরেনিয়াম থাকবে। আরও অর্ধায়ুর পরে, ২৫ গ্রাম ইউরেনিয়াম থাকবে। ইত্যাদি।
  • ইউরেনিয়ামের অর্ধায়ু একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিমাপ কারণ এটি ইউরেনিয়ামের তেজস্ক্রিয়তার হার নির্ধারণ করে। অর্ধায়ু যত ছোট, তেজস্ক্রিয়তা তত বেশি। ইউরেনিয়াম-২৩৫ এর অর্ধায়ু ইউরেনিয়াম-২৩৮ এর চেয়ে ছোট, তাই এটি একটি শক্তিশালী তেজস্ক্রিয় পদার্থ।
  • ইউরেনিয়ামের অর্ধায়ু পারমাণবিক শক্তি উৎপাদনের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। ইউরেনিয়াম-২৩৫ এর অর্ধায়ু পারমাণবিক বিভাজনের হার নির্ধারণ করে। অর্ধায়ু যত ছোট, বিভাজনের হার তত বেশি। ইউরেনিয়াম-২৩৫ এর অর্ধায়ু পারমাণবিক বিভাজনের জন্য উপযুক্ত।

আরো দেখুনঃ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top