রোজা ভঙ্গের কারন। প্রিয় পাঠক ,আমাদের মুসলিমদের কাঙ্খিত মাস রমাদান মাস, দেখতে দেখতে সেই মাসটি বছর ঘুরে আবার আমাদের কাছে হাজির হয়েছে। এটা আমাদের খুবই সৌভাগ্যের ব্যাপার যে,আমরা আরো একটি রমজান পেতে যাচ্ছি। রমজান মাস আমাদের জন্য খুবই বরকতপূর্ণ একটি মাস ,তাই আমরা চেষ্টা করব রমজানের হক গুলো পালন করতে। Roja vangar karon
রোজা ভঙ্গের কারন সমূহ
আমরা মুসলিমরা কম বেশি সবাই চেষ্টা করি রোজা রাখতে কিন্তু আমাদের জানার ভুলের কারণে অনেক সময় আমাদের মূল্যবান রোজা গুলো নষ্ট হয়ে যায়, তাই আমাদের জানতে হবে কি কি কারণে রোজা নষ্ট হয় বা ভেঙ্গে যায়। তাই আজকে আমরা জানবো কিছু রোজা ভঙ্গের কারণঃ-
- কোন ধরনের খাবার খেলে বা পান করলে। রোজা অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে খাবার খেলে বা পানি জাতীয় কিছু পান করলে রোজা ভেঙ্গে যায়।
- স্ত্রী মিলন করলে,
রোজা অবস্থায় যদি দিনের বেলায় সুবহে সাদিকের পর থেকে সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত স্বামী স্ত্রী মিলন করে তাহলে রোজা ভেঙে যাবে এবং এর পুরো কাফফারা আদায় করতে হবে।
- ইচ্ছাকৃত ভাবে মুখ ভরতি বমি করলে
কোন রোজাদার ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে মুখের ভেতর আঙুল ঢুকিয়ে মুখ ভর্তি করে তাহলে তার রোজা ভেঙে যায় কিন্তু অনিচ্ছাকৃতভাবে অল্প পরিমাণ বমি হলে বোঝা ভাঙবে না।
- ধূমপান করলে বা জাতীয় দ্রব্য সেবন করলে।
রোজাদার যদি রোজা অবস্থায় বিড়ি সিগারেট তামাক জাতীয় দ্রব্য এবং নানা ধরনের নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করে থাকে বা পান করে থাকে তাহলে রোজা ভেঙে যাবে।
- জোর পূর্বক কাউকে খাবার খাওয়ালে বা পান করালে।
কোন রোজাদার ব্যাক্তিকে যদি দেও জোর করে কোন কিছু খাইয়ে দেয় ,বা পান করায় তা হলে রোজা ভেঙ্গে যায়।
- দাঁত থেকে যদি ছোলা পরিমাণ খাবার বের হয় এবং তা যদি পেটে চলে যায় তাহলে রোজা ভেঙে যায়।
রোজাদার ব্যক্তি রোজা রাখা অবস্থায় দাঁত খেলাল করে যদি সেই খাবার গিলে ফেলে আর সেই খাবার যদি ছোলা পরিমান হয় তাহলে রোজা ভঙ্গে যায়।
- সূর্যাস্ত হয়ে গেছে মনে করে সূর্যাস্তের আগেই ইফতার করে ফেললে।
আগের দিনে যখন ইলেকট্রিসিটি বা রেডিও টেলিভিশন ছিল না তখন মানুষ সূর্যাস্ত দেখে ইফতার করতো, অনেক সময় আকাশ মেঘলা থাকার কারণে সূর্যাস্ত বোঝা যেত না তখন মানুষ ভুলে থাকতে রাজি ইফতার করে ফেলত আর এ কারণে রোজা ভেঙে যায়।
- সুবহে সাদিকের পর পর্যন্ত সাহরি গ্রহণ করলে।
কোন কারনে যদি সুবহে সাদিকের পর পর্যন্ত খাবার গ্রহণ করে এই কারণে যে, এখন পর্যন্ত সূর্যোদয় দেখা যাচ্ছে না , কিন্তু সুবহে সাদিক পার হয়ে গেছে তাহলে সেই রোজা ভেঙ্গে যাবে।
- হস্তমৈথুন করলে,
স্ত্রী সহবাস ব্যতীত অন্য কোন উপায়ে বীর্যপাত করলে রোজা ভেঙ্গে যায়।
- পায়ুপথে কোন কিছু ঢুকালে।অনেক সময় কোন সুস্থতার কারনে ডাক্তাররা রোগীকে পায় পথে কি করা যায় সাপোজিটরি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন এই সমস্ত কোন কিছু ব্যবহার করলে রোজা ভেঙে যাবে।
- দাঁতের গোড়া দিয়ে রক্ত বের হলে এবং তার পেটে চলে গেলে রোজা ভেঙে যাবে।
দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়লে এবং তা যদি পেটে চলে যায় তাহলে রোজা ভেঙে যাবে তাই খেয়াল রাখতে হবে।
- শিঙ্গা লাগালে রোজা ভেঙে যায়।
যুগ যুগ ধরে দেশের বিভিন্ন দেশে সিঙ্গা লাগানোর প্রচলন রয়েছে এটি একটি চিকিৎসা পদ্ধতি যার মাধ্যমে শরীর থেকে বদ রক্ত বের করে দেয়া হয় আর রোজা রাখা অবস্থায় এরকম সিংগা লাগালে রোজা ভেঙে যাবে।
- মহিলাদের হায়েস এবং নেফাস হলে রোজা ভেঙ্গে যায়।
রোজা রাখা অবস্থায় যদি মেয়েদের মাসিক শুরু হয়ে যায় তাহলে রোজা ভেঙ্গে যায়। এবং তা পরবর্তিতে কাজা আদায় করতে হবে।
রোজার নিয়ত।
সব ইবাদতের মূলেই রয়েছে নিয়ত,তাই আমাদের রোজার নিয়ত জানা খুবই জরুরী ,আমরা জেনে থাকলেও যেহেতু এক বছর পর পর আমাদের মাঝে রোজা আসে তাই আবার নতুন করে ঝালিয়ে নেয়া উচিত।আসুন আমরা জেনে নেই রোজার নিয়তঃ
সেহরি খাওয়ার পর রোজা রাখার নিয়ত করতে হয়। রোজা রাখার আরবি নিয়ত: نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضَا لَكَ يَا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْم
এর বাংলা উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন আছুমা গদাম মিং শাহরি রমাদ্বানাল মুবারকি ফারদ্বল্লাকা ইয়া আল্লাহু ফাতাক্বব্বাল মিন্নি ইন্নাকা আংতাস সামিউল আলিম।
বাংলায় অর্থ: হে আল্লাহ, আগামীকাল পবিত্র রমজান মাসে তোমার পক্ষ থেকে ফরজ করা রোজা রাখার নিয়ত করলাম, অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।
ইফতারের দোয়াঃ
সারা দিন রোজা রাখার পর অবশ্যই আমাদের সঠিক সময়ে ইফতার করতে হবে,এবং আল্লাহর কাছে কিছু চাইতে হবে ।আর এজন্যই ইফতারের সময় দোয়া করা উত্তম নিচে ইফতারের দোয়াটি দেয়া হলঃ
بِسْمِ الله – اَللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَ عَلَى رِزْقِكَ وَ اَفْطَرْتُ
উচ্চারণ : ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু, ওয়া আলা রিযক্বিকা আফত্বারতু।
অর্থ : ‘আল্লাহর নামে (শুরু করছি); হে আল্লাহ! আমি তোমারই জন্যে রোজা রেখেছি এবং তোমারই দেওয়া রিজিক দ্বারা ইফতার করছি।’ (আবু দাউদ, মিশকাত)
সর্বপরি আমরা আল্লাহর কাছে এ দোয়াই করি, যেন আল্লাহপাক আমদের সকলের সাহরি ,ইফতার,এবং রোজা কবুল করে নেনে,এবং সকল ভুল ত্রুটি ক্ষমা করে দেন,আর আমাদের পোষ্টের মাধ্যমে যদি আপনাদের কোন উপরকার হয় তাহলেই আমাদের স্বর্থকতা। এরকম আরো পোষ্ট পেতে আমাদের উয়েবসাইট টি ফলো করুন।ধন্যাবাদ।
আরো দেখুনঃ জুম্মা মোবারক স্ট্যাটাস