ভারত থেকে আমদানি পদ্ধতি

ভারত থেকে আমদানি পদ্ধতি

২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মোতাবেক ভারত থেকে বাংলাদেশে পণ্য আমদানি করেছে ৮.৬২ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে অন্য আমদানি হয়েছে ১৭ ১৮ এর প্রায় দ্বিগুণ, ১৬.১৬ বিলিয়ন ডলার। এই সমীক্ষা থেকে বোঝা যায় বাংলাদেশি মার্কেটে ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্যের চাহিদা দিনকে দিন কি পরিমান বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ভারত থেকে পণ্য আমদানি করা আপনার জন্য সহজ হবে আপনি যদি জানেন কোথায় থেকে কখন কি কি পদক্ষেপ নিয়ে সহজে পণ্য আমদানি করবেন। আমাদের আজকের পোস্টে আলোচনা করা হয়েছে ভারত থেকে আমদানি পদ্ধতি সম্পর্কে। কিভাবে আপনি আপনার চাহিদা মত পণ্য ভারত থেকে আমদানি করতে পারবেন তার একটি গাইডলাইন এখানে পেয়ে যাবেন।- Import procedure from India

ভারত থেকে আমদানি পদ্ধতি

১. প্রোডাক্ট সিলেক্ট করতে হবে আমদানি করার জন্য

প্রথমে আপনাকে লাভজনক একটি প্রোডাক্ট সিলেক্ট করতে হবে আমদানি করার জন্য। ভারত থেকে বাংলাদেশের প্রোডাক্ট আনার আগে আপনাকে দেখতে হবে বাংলাদেশী মার্কেটে ভারতের কোন কোনটি চাহিদা বেশি এবং আপনার জন্য লাভজনক হবে। ভারত থেকে বাংলাদেশে অনেক ধরনের প্রোডাক্ট আমদানি করা হয়ে থাকে। আপনাদের যদি আগে থেকেই কোন ব্যবসা থেকে থাকে এবং আপনি যদি সেই প্রোডাক্ট টাই ব্যবসা করতে চান তাহলে এই প্রোডাক্ট সিলেকশন অংশটুকু আপনি এড়িয়ে যেতে পারেন। বাংলাদেশ ভারত থেকে সবচাইতে বেশি পণ্য আমদানি হয় হচ্ছে তুলা।

ভারত থেকে কি কি পণ্য বাংলাদেশ আমদানি করা হয় তা দেখতে এই লিংকে প্রবেশ করুন।- ভারত থেকে আমদানি পণ্য তালিকা

পন্য সিলেকশনের ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে সময় নিয়ে ভাবতে হবে। কারণ এর ওপরে আপনার ব্যবসার লাভ-লোকশান নির্ভর করছে। প্রকৃয়াটি করার সময় আপনাকে প্রধানত তিনটি বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে।

১. মার্কেটে পণ্যটির চাহিদা কেমন।
২. মার্কেটিং পণ্যটির কম্পিটিশন কেমন
৩. প্রফিট মার্জিন কেমন।

এই বিষয়গুলো ভেবে দেখে আপনাকে পণ্য সিলেকশন করতে হবে।

২. বিশ্বাসযোগ্য সাপ্লায়ার খুঁজে বের করা

যেহেতু আপনি এক দেশ থেকে অন্য দেশে পণ্য আমদানি করছেন। আপনি কার কাছ থেকে প্রোডাক্ট কিনছেন তাকে দেখতে পারছেন না। তিনি সৎ নাকি অসৎ এবং আপনি যে প্রোডাক্টটি দেখেছেন সেটি পাচ্ছেন কিনা এসব প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়। তাই সাপ্লায়ার বেছে নেওয়ার প্রক্রিয়াটি আপনাকে অনেক ভালোভাবে করতে হবে। আপনি চাইলে ইন্ডিয়া মার্ট বা আলিবাবা এর সাহায্য নিতে পারেন। সেখানে সাপ্লায়ার এর সাথে পণ্যের মান দাম সময় ইত্যাদি আলোচনা করে নিতে পারেন।

এ ছাড়া ট্রেড ফেয়ারে অংশগ্রহণ করে সম্ভাব্য শক্তিশালী সাপ্লায়ার এর সাথে ডিল করতে পারেন। কয়েকজন সাপ্লায়ারের সাথে কথা বলে তুলনা করে নিবেন যে কোন পণ্যের সাইজ এবং দাম কেমন। এরপর একজনকে সিলেক্ট করবে। ডেল ফাইনাল করার আগে সাপ্লায়ার এর সার্টিফিকেট দেখবেন এবং তার ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করে নিবেন। তারপর ডাক্তার মান এবং ইন্ডাস্ট্রিতে তার কেমন খ্যাতি সেটি ডিল ফাইনাল করার আগে চেক করে নিবেন।

Import procedure from India

৩.  প্রয়োজনীয় নিয়ম-নীতি ফলো করে কাগজপত্র সংগ্রহ করা

পণ্য আমদানি করতে যে ডকুমেন্টগুলো লাগবে তা হলো

১. আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয় পত্র ও সদ্যতোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
২. প্রতিষ্ঠানের নাম ও ঠিকানা হালনাগাদকৃত ট্রেড লাইসেন্স।
৩. ই টি আই এন/আয়কর প্রত্যয়ন পত্র।
৪. প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সচ্ছলতা সম্পর্কিত মনোনীত ব্যাংক কর্তৃক প্রত্যয়ন পত্র বা ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট।
৫. স্বীকৃত চেম্বার/ব্যবসায় সংশ্লিষ্ট ট্রেড এসোসিয়েশনের হালনাগাদকৃত সদস্য তা সনদ।

একবার আপনি IRC পেয়ে গেলে নিশ্চিন্তে পণ্য আমদানি করতে পারেন। আইআরসি আপনি বিভিন্ন ধরনের করতে পারেন অর্থাৎ আপনি বার্ষিক কত টাকার আমদানি করবেন তার ওপর ভিত্তি করে নিবন্ধন ফি বা বার্ষিক নবায়নের ফি প্রদান করতে হবে।

কাগজপত্র সবকিছু কমপ্লিট হওয়ার পর আপনি ইমপোর্টার এর সাথে যোগাযোগ করবেন। তার কাছ থেকে পণ্যের সমস্ত ডিটেইলস আপনি জেনে নেবেন। এবং সে কিভাবে পণ্যটি পাঠাবে সবকিছু জেনে নেওয়ার পর আপনাকে একটি পেপার দিবে সেটি হচ্ছে PI (পি আই)। সব ঠিক থাকলে আপনি ব্যাংকে গিয়ে LC এলসি খুলবেন। এটি খোলা এতটা কঠিন কিছু না। আপনি ব্যাংকে গেলেই তারা বুঝিয়ে দিবে। এলছি খোলা হয়ে গেলে আপনার ইমেইল এড্রেসে ব্যাংক থেকে একটি কপি তারা পাঠিয়ে দিবে।

Lc এর এই কপি আপনি ইমপোর্টার এর কাছে পাঠিয়ে দিবেন। ইমপোর্টার আপনার এলসি দেখে সব ঠিক থাকলে সে তার পণ্যের সকল ডিটেলস তার ব্যাংকে জমা দেবে এবং সেই ডকুমেন্টস গুলো আপনার ব্যাংকে চলে আসবে। এবার আপনার ব্যাংক থেকে ডকুমেন্টস গুলো নিয়ে সকল বিষয় মেনে ট্যাক্স জমা দিয়ে পণ্য আপনাকে ছুটিয়ে নিয়ে আসতে হবে বা খালাস করে নিয়ে আসতে হবে।

ভারত থেকে আমদানি পণ্য তালিকা

৪.  কাস্টম ক্লিয়ারেন্স

এক্ষেত্রে আপনার লোকেশন এর কাছাকাছি যে কাস্টম আছে তাকে সিলেক্ট করুন। তাতে আপনার পণ্য ডেলিভারি নিতে সুবিধা হবে। বাংলাদেশ ভারত মোট ২৫টি স্থলবন্দর থাকলেও বর্তমানে চালু রয়েছে মাত্র ১৪ টি স্থলবন্দর। আপনি আপনার সুবিধামতো এই ১৪ টি থেকে যেকোনো একটি সিলেক্ট করুন। এরপর আপনার পণ্যটি বন্দরে পৌঁছে গেলে আপনি একটি কল পাবেন। এবং কাস্টম অফিসে গিয়ে আপনি ব্যাংক থেকে যে ডকুমেন্টগুলো নিয়েছিলেন সেগুলো দেখিয়ে ভ্যাট প্রদান করে আপনার পণ্য নিয়ে চলে আসতে পারেন।

সাধারণত পণ্য খালাস করতে ১০ থেকে ১২ দিন পর্যন্ত সময় লেগে থাকে। অন্য খালাসের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বন্দরের অবস্থান ১০৮ নম্বরে। অর্থাৎ একটু বেশি সময় সাপেক্ষ। তবে ধৈর্য ধরে একবার পণ্য খালাস করলেই আপনি আপনার পণ্য মার্কেটে তুলতে পারবেন। তবে তার আগে পণ্য ভালোভাবে দেখে ডকুমেন্টস অনুযায়ী মিলিয়ে চেক করে নিবেন। পণ্যের কোয়ালিটি এবং কোয়ান্টিটি সঠিকভাবে চেক করে নিন। এরপর আপনার পণ্যটি মার্কেটিং এ কাজে লাগাতে পারেন। উপরোক্ত দাঁতগুলো ফলো করে আপনি সহজেই ভারত থেকে অন্য আমদানি করতে পারেন। আশা করি এ বিষয়ে আপনি প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়ে গেছেন। এছাড়া আরো কিছু জানার থাকলে আমাদের কমেন্ট করে জানান এবং পোস্টটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন।

আরো দেখুনঃ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top