যাকাতুল ফিতর কি।আমাদের মুসলিমদের জন্যে আল্লাহতালার বিধান মান্য করা ফরজ, তেমনি তার নিষেধ করা কাজ থেকে আমাদের বিরত থাকাও আবশ্যক।আমাদের ইসলামের পবিত্র পাঁচটি স্তম্ভ রয়েছে আর এই স্তম্ভ হলো মেনে চলা অতি আবশ্যক তার মধ্যে যাকাত অন্যতম। যাকাত হচ্ছে ইসলামিক আর্থিক ইবাদত। zakat ki vabe aday korte hoy
যাকাতের মাধ্যমে ধনীগণ তাদের সম্পদের কিছু অংশ গরিব ও অভাবে অসহায়দের মাঝে বন্টন করে থাকেন , আর এভাবেই গরিব ও অভিমানুষরা সহজে সুন্দরভাবে চলতে পারে এবং আল্লাহর এবাদত করতে পারেন। যাকাত এমন একটা এবাদত যার মাধ্যমে ধনীগণ বা যাকাত আদায় সক্ষম ব্যক্তিরা তাদের সম্পর্কে পবিত্র করে থাকেন।
যাকাত বিষয়ে নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ-
১৩৯৫. ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু‘আয (রাঃ)-কে ইয়ামান দেশে (শাসক হিসেবে) প্রেরণ করেন। অতঃপর বললেন, সেখানকার অধিবাসীদেরকে এ সাক্ষ্য দানের প্রতি আহবান করবে যে, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল। যদি তারা তা মেনে নেয় তবে তাদেরকে অবগত কর যে, আল্লাহ তা‘আলা তাদের উপর প্রতি দিনে ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরজ করেছেন। যদি সেটাও তারা মেনে নেয় তবে তাদেরকে অবগত কর যে, আল্লাহ তা‘আলা তাদের উপর তাদের সম্পদের মধ্য থেকে সাদাকা (যাকাত) ফরজ করেছেন। যেটা ধনীদের নিকট থেকে গৃহীত হবে আর দরিদ্রদের মাঝে প্রদান করা হবে। (১৪৫৮, ১৪৯৬, ২৪৪৮, ৪৩৪৭, ৭৩৭১, ৭৩৭২) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৩০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৩১০)
যাকাত একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ পবিত্র করা ,শুদ্ধ করা ইত্যাদি।
Table of Contents
যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত কি
শুধু যে টাকার মালিক হলে যাকাত তার ওপর ফরজ হয় তা নয়, যাকাত ফরজ হওয়ার পেছনে কিছু কারণ রয়েছে । এই শর্তগুলো পূরণ হলেই শুধুমাত্র তার ওপরে যাকাত ফরজ হয় । তাহলে অবশ্যই আমাদের এই যাকাত ফরজ হওয়ার শর্তগুলো সম্পর্কে জানতে হবে। নিচে যাকাতের শর্ত গুলো দেওয়া হল
যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত ৭ টি । যথা:
১. মুসলিম হওয়া
২. স্বাধীন হওয়া
৩. বালিগ হওয়া
৪.আকিল বা জ্ঞানবান হওয়া
৫.নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকা
৬. পূর্ণাঙ্গ মালিক হওয়া
৭.পূর্ণ এক বছর মালিকানায় থাকা ।
যাকাত ও ফিতরার মধ্যে পার্থক্য কি
যাকাত ও ফিতরা দুটিই ইবাদত ,এ দুটি বিষয়ের মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে,নিচে তা তুলে ধরা হলঃ-
যাকাত | ফিতরা |
যাকাত শব্দের অর্থ পবিত্রতা ও বৃদ্ধি। | ফিতর বা ফাতুর শব্দের অর্থ সকালের খাদ্যদ্রব্য বা যা দ্বারা রোজাদারগণ রোজা ভঙ্গ করেন। |
ব্যক্তির মালিকানায় নিসাব পরিমাণ সম্পদ পূর্ণ এক বছর থাকলেই তাকে সম্পদের ২.৫ শতাংশ হারে যাকাত প্রদান করতে হয় | নিসাব পরিমাণ সম্পদ পূর্ণ এক বছরকাল স্থায়ী হবার প্রয়োজন নেই বরং ঈদুল ফিতরের দিন সকালে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলেই তার ওপর ফিতরা দিতে হয়। |
যাকাতের পরিমাণ হচ্ছে সম্পদের ৪০ ভাগের ১ ভাগ বা ২.৫ শতাংশ | ফিতরা প্রদান করতে হবে ১ “ছা” যার পরিমাণ গম ২ কেজি ৪০ গ্রাম (প্রায়) ও চাল ২ কেজি ৫০০ গ্রাম (প্রায়) |
যাকাত প্রদানের ৮টি খাত রয়েছে | বেশিরভাগ আলেমদের মতে শুধুমাত্র গরিব, অসহায় ও দুস্থ লোকদের ফিতরা প্রদান করতে হবে। |
যাকাত ইসলামের ৫টি স্তম্ভের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদত। আল্লাহ তা’লা পবিত্র কুরআনে, সূরা তওবার ৬০ নম্বর আয়াতে যাকাতের কথা উল্লেখ করেছেন। | ফিতরা একটি ওয়াজিব ইবাদত। |
যাকাত অর্জিত সম্পদের পবিত্রতা রক্ষার জন্য , | ফিতরা রমজান মাসে রোজাদরদের ভুল-ত্রুটির কাফ্ফারা ও সাদাকাহ সাদাকাহ হিসেবে দেয়া হয়। |
যাকাত কিভাবে আদায় করতে হয়
যাকাত কিভাবে আদায় করতে হয়।যাকাত আদায় করার ক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে, এবং কোরআন ও হাদিসের আলোকে যাকাত আদায় করতে হবে।
ক. সোনা ৭.৫ তোলা=৯৫.৭৪৮ গ্রাম (প্রায়)। খ. রুপা ৫২.৫ তোলা=৬৭০.২৪ গ্রাম (প্রায়)। (আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/৩৯৪; আল ফিকহুল ইসলামী : ২/৬৬৯)
দেশি-বিদেশি মুদ্রা ও ব্যাবসায়িক পণ্যের নিসাব নির্ধারণে সোনা-রুপা হলো পরিমাপক। এ ক্ষেত্রে ফকির-মিসকিনদের জন্য যেটি বেশি লাভজনক হবে, সেটিকে পরিমাপক হিসেবে গ্রহণ করাই শরিয়তের নির্দেশ। তাই মুদ্রা ও পণ্যের বেলায় বর্তমানে রুপার নিসাবই পরিমাপক হিসেবে গণ্য হবে। যার কাছে সাড়ে ৫২ তোলা সমমূল্যের দেশি-বিদেশি মুদ্রা বা ব্যাবসায়িক পণ্য মজুদ থাকবে, তার ওপর জাকাত ওয়াজিব হবে। যে সম্পদের ওপর জাকাত ফরজ, তার ৪০ ভাগের এক ভাগ (২.৫০ শতাংশ) জাকাত দেওয়া ফরজ। সম্পদের মূল্য নির্ধারণ করে শতকরা আড়াই টাকা বা হাজারে ২৫ টাকা হারে নগদ অর্থ কিংবা ওই পরিমাণ টাকার কাপড়চোপড় বা অন্য কোনো প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে দিলেও জাকাত আদায় হবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৫৭২; সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৬২৩)
ফিতরা কিভাবে দিতে হয়
ফিতরা বা ফেতরা(فطرة) আরবী শব্দ, যা ইসলামে যাকাতুল ফিতর (ফিতরের যাকাত) বা সাদাকাতুল ফিতর (ফিতরের সদকা) নামে পরিচিত। ফিতর বা ফাতুর বলতে সকালের খাদ্যদ্রব্য বোঝানো হয় , যা দ্বারা রোজাদারগণ রোজা ভঙ্গ করেন।[১] যাকাতুল ফিতর বলা হয় ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গরীব দুঃস্থদের মাঝে রোজাদারদের বিতরণ করা দানকে। রোজা বা উপবাস পালনের পর সন্ধ্যায় ইফতার বা সকালের খাদ্য গ্রহণ করা হয়। সেজন্য রমজান মাস শেষে এই দানকে যাকাতুল ফিতর বা সকালের আহারের,
যাকাত বলা হয়
فرض رسول الله صلى الله عليه وسلم- زكاة الفطر صاعاً من تمر أو صاعاً من شعير، على الذكر والأنثى والصغير والكبير والحر والعبد من المسلمين، وأمر أن تؤدى قبل خروج الناس للصلاة” متفق عليه রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক স্বাধীন-ক্রীতদাস, নারী-পুরুষ, ছোট-বড় মুসলমানের যাকাতুল ফিতর এক ‘সা’ পরিমাণ খেজুর বা যব ওয়াজিব করেছেন। তিনি লোকদের ঈদের নামাযে বের হওয়ার পূর্বেই তা আদায় করার আদেশ দিয়েছেন।[৩][৪]
যাকাতের প্রথম হকদার কারা
যাকাত হচ্ছে ধনীদের সম্পদে গরিবের হক, যাকাত হচ্ছে আমাদের ফরজ ইবাদত, যাকাত তাই আমাদের সঠিকভাবে আদায় করতে হবে এবং যাকাত গ্রহণের যাদের পুর্নো হক রয়েছে তারাই যাকাত গ্রহণ করতে পারবে , অন্যথায় তারা যাকাত গ্রহণ করতে পারবেনা , তাই আমাদের উচিত হকদার নির্বাচন করে তাদের হাতে যাকাত পৌঁছে দেয়া ।
- কেমন গরিব যারা রোজগার করতে অক্ষম।
- যার নিকট প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম অর্থ রয়েছে।
- যাকাত আদায়ের যে সমস্ত ভাইয়েরা নিযুক্ত থাকেন তারা যাকাত গ্রহণ করতে পারেন।
- সে সকল বিধর্মী দরিদ্র তারা যদি যাকাতে আকৃষ্ট হয়ে ইসলাম গ্রহণ করার আশঙ্কা থাকে তাহলে তাকে যাকাত দেয়া যায়।
- এরকম গোলাম যাদের আজাদ হওয়ার অনেক ইচ্ছা রয়েছে কিন্তু অর্থের অভাবে আজাদ হতে পারছে না তাদেরকে যাকাত দেয়া যাবে।
- এরকম মুসাফির যারা টাকার অভাবে নিজের দেশে যেতে পারছে না।
প্রিয় পাঠক,আশা করি আমাদের পোষ্টি আপনাদের ভাল লাগবে,এরকম আরো পোষ্ট পেতে আমাদের ওয়েব সাইট টি ফলো করুন,আপনারা কি রকম পোষ্ট পেতে চান আমাদেরকে কমেন্ট করে যানান,আমরা আপনাদের চাহিদা অনুযায়ি পোষ্ট দেয়ার চেষ্টা করবো।
আরো দেখুনঃ