রাশিয়া সরকারিভাবে রুশ ফেডারেশন নামে পরিচিত। এই দেশটি এশিয়া এবং ইউরোপ উভয় মহাদেশের মধ্যে অবস্থিত এবং বিশ্বের বৃহত্তম একটি দেশ। রাশিয়ার ৭৭ শতাংশ এশিয়া মহাদেশে এবং ২৩ শতাংশ ইউরোপ মহাদেশে অবস্থিত। আমাদের আজকের পোস্টে রাশিয়ার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস এবং এই দেশ সম্পর্কে কিছু প্রয়োজনীয় এবং অদ্ভুত তথ্য জানবো।
রাশিয়া নামটি রুশ নামক মধ্যযুগীয় একটি রাষ্ট্র থেকে এসেছে যেখানকার অধিকাংশ জনগণই ছিল ইস্ট স্লাব গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। দেশটির ইতিহাস শুরু হয় তৃতীয় এবং অষ্টম খ্রিষ্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে। অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত এই জাতিটি তাদের সম্রাজ্য সম্প্রসারণ করে ইউরোপের পোল্যান্ড থেকে উত্তর আমেরিকার আলাস্কা পর্যন্ত।-Facts About Russia
যা ছিল ইতিহাসের তৃতীয় বৃহত্তম সাম্রাজ্য। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর ছবি এতে রুসিও প্রজাতন্ত্র রুশ ফেডারেশন হিসেবে গঠিত হয়। এবং একক রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
রাশিয়ার মোট আয়তন ১,৭০,৭৫,৪০০ বর্গকিলোমিটার। যেখানে রয়েছে পৃথিবীর মোট বসবাসযোগ্য জমির আট ভাগের এক ভাগ। রাশিয়া বিশ্বের নবম জনবহুল দেশ। যেখানে ২০২০ সালের হিসেব অনুযায়ী ১৪৪.১ মিলিয়ন মানুষ বসবাস করে।
উত্তর এশিয়া ও পূর্ব ইউরোপে অবস্থানের ফলে রাশিয়া মোট নয়টি টাইম জোনের অন্তর্ভুক্ত। মস্কো হচ্ছে রাশিয়ার রাজধানী এবং এই দেশের বৃহত্তম শহর।
এই দেশে প্রায় ৭৩.৮ শতাংশ জনসংখ্যা শহরের কেন্দ্রে বসবাস করে। রাশিয়া বিশ্বের বৃহত্তম দেশ। এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে আনুমানিক ১.৮ গুণ বড়। রাশিয়ার সীমান্ত এলাকা ২০২৪১ কিলোমিটার দীর্ঘ। যা বিশ্বের দ্বিতীয় দীর্ঘতম সীমান্ত এলাকা।
রাশিয়া আয়তনের দিক থেকে প্রায় প্লুটো গ্রহের সমান। আশ্চর্যজনক ভাবে রাশিয়ার পুরুষগণ এর মধ্য ২৫ শতাংশ তাদের বয়স ৫৫ হওয়ার আগেই মারা যান। যার প্রধান কারণ অতিরিক্ত মদ্যপান।
রাশিয়ায় পুরুষদের তুলনায় প্রায় এক কোটি বেশি নারী রয়েছে। রাশিয়ায় বর্তমানে পুরুষদের তুলনায় প্রায় এক কোটির উপরে বেশি নারী রয়েছে। ধারণা করা হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অনেক পুরুষ মারা যাওয়ার ফলে এই ভারসাম্য হীনতার সৃষ্টি হয়েছে।
রাশিয়ায় পুরুষরা কখনোই উপহার হিসেবে নারীদের গোলাপ দেয় না। এটি এখানে দুর্ভাগ্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। কারণ এই ফুল অন্তোষ্টিক্রিয়ার সাথে যুক্ত। দেশটির সাগরের মাধ্যমে জাপানের সাথে এবং বেরিন প্রণালীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কার সাথে সামুদ্রিক সীমানা রয়েছে।
রাশিয়া পারমাণবিক শক্তি সম্পন্ন পাঁচটি স্বীকৃত দেশের মধ্যে অন্যতম। এছাড়া দেশটিতে বিশ্বের বৃহত্তম ধ্বংসাত্মক অস্ত্র ভান্ডার রয়েছে। সর্বকালের অলিম্পিক গেমসের পদক তালিকায় রাশিয়া দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছে। ১৯৮০ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক এবং ২০১৪ শীতকালীন অলিম্পিক রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া ২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপ এখানে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
১৯০৮ সালে রাশিয়ান অলিম্পিক দল লন্ডনে ১২ দিন দেরি করে এসেছিল। কারণ তখনও তারা জুলিয়ান ক্যালেন্ডার ব্যবহার করছিল। রাশিয়ার বৈকাল লেক এ বিশ্বের মোট অপরিচিত মিষ্টি পানির বিশ শতাংশ রয়েছে। এবং এই লেকে প্রায় ১৭০০ প্রজাতির উদ্ভিদ এবং প্রাণী বসবাস করে। যার মধ্য দুই তৃতীয়াংশ বিশ্ব বিশ্বের অন্য কোথাও পাওয়া যায় না।
রাশিয়ার জনসংখ্যা বছরে প্রায় 0.02 শতাংশ হারে কমে যাচ্ছে। রাশিয়ায় স্বাক্ষরতার হার খুবই বেশি। এখানে প্রায় ৯৯.৭ শতাংশ মানুষ শিক্ষিত। রাশিয়ার অর্থনীতি বিশ্বের মধ্যে প্রায় অষ্টম বৃহত্তম। রাশিয়ায় মাথাপিছু গড় আয়ু প্রায় $14000 মার্কিন ডলার।
রাশিয়া দুর্নীতিগ্রস্ত একটি রাষ্ট্র। এই দেশ ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালে ২০১৩ সালের একটি দুর্নীতি সূচকে বিশ্বের ১৭৭ টি দেশের মধ্য ১২৭ তম অবস্থান এ ছিল। রাশিয়ায় বারটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি রয়েছে।
২০১১ সালে রাশিয়া বিশ্বের প্রধান তেল উৎপাদনকারী দেশ হয়ে ওঠে। এবং এটি প্রাকৃতিক গ্যাসের পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎপাদক।
রাশিয়াতে প্রায় ২৬১.৯ মিলিয়ন সেলফোন ব্যবহার করা হয় এবং ৪২.৯ মিলিয়ন ল্যান্ড লাইন রয়েছে। এই দেশে যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পাদন করার জন্য প্রায় এক হাজারটি লাইসেন্সড কোম্পানি রয়েছে।
রাশিয়ায় বিশ্বের দীর্ঘতম রেলপথ অবস্থিত। ট্রান্স সাইবেরিয়ান রেলপথ মসকো কে রাশিয়া পূর্ব দিক পর্যন্ত সংযুক্ত করেছে। এই রেল পথটি ৯২২০ কিলোমিটার দীর্ঘ। এই রেলপথ দিয়ে যাত্রা শেষ করতে বিরতিহীন ভাবে ১৫২ ঘন্টা এবং ২৭ মিনিট সময় লাগে।
রাশিয়ায় বিশ্বের বৃহত্তম ম্যাগডোনাল্ড রেস্তোরা অবস্থিত। বেশিরভাগ রাশিয়ানদের জন্য ডান হাতে বিয়ের আংটি পরা একটি ঐতিহ্য। রাশিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ জাদুঘর সেন্ট পিটার্সবার্গে অবস্থিত দি হারমিটেজ এ প্রায় ৭০ টি বিড়ালের বসবাস।
মস্কোতে বিশ্বের সবচাইতে বেশি বিলিয়নিয়ার এর বসবাস। এখানে মোট ৭৩ জন বিলিয়ন ইয়ার বসবাস করেন। এই দিক থেকে প্রথম অবস্থানে রয়েছে নিউইয়র্ক। এখানে ৮২ জন মিলিয়নিয়ার এর বসবাস।
মদ্যপানের দিক থেকে রাশিয়ার অবস্থান বিশ্বের চতুর্থ তম। প্রথম স্থানে রয়েছে বেলারুশ, দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মলদাবিহা এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে লিথিও নিয়া।
২০১১ সাল পর্যন্ত রাশিয়াতে ১০ শতাংশের কম অ্যালকোহলযুক্ত যেকোনো কিছু স্বাভাবিক পানীয় হিসেবে বিবেচিত হতো। মস্কর সেন্ট বাসীলের গির্জা পষ্টলিক নামক এক ব্যক্তি তৈরি করেছিলেন। এবং এই গির্জা তৈরি হওয়ার পর তাকে অন্ধ করে দেয়া হয়। যাতে পরবর্তীতে সে এইটার সমকক্ষ কিছু তৈরি করতে না পারে।
রাশিয়াতে ইউরোপের সর্বোচ্চ পয়েন্ট মাউন্ট এলব্রাশ অবস্থিত। এই পয়েন্ট সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫৬৪২ মিটার উঁচুতে অবস্থিত।
বিশ্বের প্রথম উপগ্রহ স্ফুটনিক সোভিয়েত ইউনিয়ন এর দ্বারা চালু হয় ১৯৫৭ সালে। রাশিয়া পুনঃ জীবিত করা সবচাইতে প্রাচীন উদ্ভিদের জন্মস্থান। এই উদ্ভিদ ৩২ হাজার বছর বয়সের পুরনো বীজ থেকে জন্ম নেয়।
রাশিয়ার ডায়ালিং কোড হচ্ছে ০০৭। এদেশের প্রচলিত মুদ্রা হচ্ছে রাশিয়ান রুবল। রুশ ভাষা রাশিয়া বা রুশ প্রজাতন্ত্রের সরকারি ভাষা। এই ভাষায় রাশিয়ার প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ কথা বলে থাকে। এছাড়াও রাশিয়াতে প্রায় ৮০ টির ও বেশি ভাষা প্রচলিত।
আরো দেখুনঃ
তাজমহল সম্পর্কে অজানা তথ্য -বন্ধ ঘরের রহস্য
চীনের প্রাচীর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য
কানাডা সম্পর্কে বিষ্ময়কর কিছু তথ্য -সবারই জানা প্রয়োজন
সিঙ্গাপুর সম্পর্কে বিষ্ময়কর কিছু তথ্য
যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পার্থক্য !
সাহাবী গাছ সম্পর্কে অজানা সব তথ্য এবং বিস্তারিত