বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যাক্তিদের মধ্য একজন হলেন মুকেশ দিরুবাই আম্বানী। শুধু ভারতেই নয়, এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যাক্তিদের তালিকায় তিনি রয়েছেন প্রথম অবস্থানে।-Facts About Mukesh Ambani
মুকেশ আম্বানী তার অসাধারণ নেতৃত্য গুণ মেধা এবং পরিশ্রমের বলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন একজন সফল ব্যাবসায়ী হিসেবে। মুকেশ আম্বানী ভারতের সবচেয়ে বড় প্রাইভেট সেক্টর রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এর চেয়ারম্যান এবং ব্যাবস্থাপনা পরিচালক।
রিলায়েন্স মূলত শোধন, পেট্রো কেমিক্যাল গ্যাস এবং তেল নিয়ে কাজ করে। বাজার মূল্যের দিক থেকে এটি ভারতের সবচেয়ে বড় কোম্পানী। এই কোম্পানীর ৪৪.৭% শেয়ার রয়েছে মুকেশ আম্বানীর।
মুকেশ আম্বানী রিলায়েন্স ইনফো কো. এর প্রতিষ্ঠা করেন যা বর্তমানে রিলায়েন্স কমিউনিকেশন নামে পরিচিত। ২০০৮ সালে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগের দল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স কে ১১১.৯ মিলিয়ন ডলারে কিনে নিলে ফোর্বস তাকে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী স্পোর্টস ওনার দের একজন হিসেবে ঘোষনা করেন।
বর্তমানে মুকেশ আম্বানির মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৮২.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২২ সালে ফর্বস অনুযায়ী পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যাক্তিদের তালিকায় তার অবস্থান ৮ তম।
ভারত, এমনকি এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যাক্তিদের তালিকায় তিনি রয়েছেন ১ম স্থানে। ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনি টানা ১৩ বছর ফোর্বসের তালিকায় ভারিতের সবচেয়ে ধনী ব্যাক্তির স্থান ধরে রাখেন।
আমাদের আজকের আর্টিকেলটি ভারতীয় এই ব্যাবসায়ি মুকেশ আম্বানী কে নিয়ে। যিনি তার বিচক্ষণতা এবং পরিশ্রম দিয়ে গড়ে তুলেছেন ব্যাবসার এক বিশাল সম্রাজ্য। যিনি রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রি কে নিয়ে গেছেন সাফল্যের উচ্চ শিখরে। যার সাফল্যের গল্প আজ লাখো তরুণের মনে অনুপ্রেরণা যোগায়।
১৯৫৭ সালের ১৯ এপ্রিল, মুকেশ ধীরুভাই আম্বানি জন্মগ্রহণ করেন ইয়েমেনের এডেন শহরে। রিলায়েন্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ধীরুভাই আম্বানি এবং তার স্ত্রী ককিলা বেন আম্বানী। ৪ সন্তানের মধ্য তিনি সবার চেয়ে বড়। তার ছোট ভাই অনিল অম্বানী এবং ২ বোন দিপ্তি সালগাওকার ও নিগা কোটারি।
ধীরুভাই আম্বানি প্রথম দিকে ইয়েমেনের একটি কোম্পানী তে চাকরী করতেন। কিন্তু ১৯৫৮ সালে তিনি নিজ দেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। ভারতে এসে আম্বানী পরবার মুম্বাই এর ভূলেশ সহরে বসবাস শুরু করেন।
এ সময় ধীরুভাই আম্বানি মশলা এবং টেক্সটাইল নিয়ে ব্যাবসা শুরু করেন। শৈসবে মুকেশ পরাশুনার পাশাপাশি ফুটবল হকির মতো খেলাধূলায় এবং গ্রাম এলাকায় ও মুম্বাই এ বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করতে পছন্দ করতেন।
তার বাবাও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার থেকে বাস্তবিক শিক্ষাকেই বেশি প্রাদান্য দিতেন। মুকেশ আম্বানী বুম্বাই এর পেদার রোডের হিল গ্রাঞ্জ হাই স্কুলে পড়াশোনা করেন। যেখানে তার সহপাঠী ছিলেন আনন্দ জৈন, যিনি পরবর্তীতে তার সহযোগী হয়ে উঠেন।
এরপর তিনি Institute of Chemical Technology থেকে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। পরবর্তীতে মুকেশ এমবিএ করার জন্য স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। কিন্তু ১৯৮০ সালে তিনি এমবিএ শেষ না করেই ভারতে ফিরে আসেন এবং তার বাবাকে রিলায়েন্স প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করেন। সেসময় রিলায়েন্স একটি ক্ষুদ্র কিন্তু দ্রুত বর্ধমান প্রতিষ্ঠান ছিলো।
১৯৮১ সালে মুকেশকে তার বাবা একটি পলিস্টার কারখানার দ্বায়িত্ব দেন। তিনি তার বাবার কোম্পানী তে সুতা উতপাদনের ব্যাবসা কে ভারতের প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত প্রসারিত করেন।
তিনি তাদের ব্যাবসা কে পেট্রোকেমিক্যাল, পেট্রোলিয়াম পরিশুদ্ধকরণ, তেলিকমিউনিকেশন, বিনোদন, সম্পত্তি ব্যাবস্থাপনা এবং তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান ইত্যাদি ক্ষেত্রে ছড়িয়ে দেন।
ফলে ভারতের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মহলেও বেশ সুনাম অর্জন করেন। এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীগুলো তার কোম্পানীর সংগে বিভিন্ন ব্যাবসা করতে আগ্রহী হয়ে উঠে।
২০০২ সালে ধীরুভাই আম্বানির মৃত্যুর পর কোম্পানীর মালিকানা নিয়ে মুকেশ আম্বানী এবং তার ছোটভাই অনিল আম্বানির মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এর ফলে মিকেশ আম্বানী কোম্পানীর তেল, টেক্সটাইল এবং শোধনাগারের ব্যাবসার মালিকানা পান।
২০১০ সালে তার নেতৃত্বে রিলায়েন্স তৈরি করে পৃথিবীর বৃহত্তম তেল শোধনাগার। ২০১৩ সালে পৃথিবীর তেল আবিষ্কারক দেশগুলোর মধ্যে ভারত ২৩ তম অবস্থান অর্জন করে। ফলে তেল ও জ্বালানী বিশ্বে রিলায়েন্স একটি সমৃসদ্ধশালী নামে পরিণত হয়।
২০১৬ সালে মুকেশ আম্বানীর নেতৃত্বে তাদের নিজস্ব ৪জি স্মার্টফোন ব্র্যান্ড LYF বের করে। যা ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠে। ফলে রিলায়েন্স এর শেয়ার আরো বেড়ে যায়।
১৯৮৫ সালে মুকেশ আম্বানী নিতা আম্বানি কে বিয়ে করেন। তাদের বড় ছেলে অনন্ত আম্বানি এবং ছোট ছেলে আকাশ আম্বানি রিলায়েন্স জিয়ো ইনফো কমের কৌশলগত বিভাগের প্রধান। তাদের মেয়ে ইষা আম্বানী জিয়ো রিলায়েন্স রিটেইল বিভাগের বর্ড মেম্বার।
বর্তমানে আম্বানী পরিবার মুম্বাই এ তাদের ব্যাক্তিগত ২৭ তলা দালান এন্টিলিয়ায় বসবাস করেন। যা বিশ্বের অন্যতম ব্যায়বহুল বাড়িগুলোর একটি। বাড়িটির বর্তমান মূল্য ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
মুকেশ আম্বানী তার ব্যাবসায়ীক জীবনে বেশ কিছু পুরষ্কার অর্জন করেন। ২০১০ সালে হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ থেকে তাকে ৫ম বেস্ট পারফর্মিং গ্লোবাল সিইও ঘোষনা করা হয়। একই বছর তিনি বারোডার এমএস ইউনিভার্সিটি থেকে সম্মান্সূচক ডক্টরেট উপাধি লাভ করেন। ২০১৬ সালে মুকেশ আম্বানীকে কেমিক্যাল হেরিটেজ ফাউন্ডেশন থেকে Othmer Gold Medal দেয়া হয়।
মুকেশ আম্বানি তার দুরদর্শীতা এবং দৃঢ় প্রচেস্টা বলে আজ হয়ে উঠেছেন পৃথিবীর সফল ব্যাক্তিদের একজন। টাটা গ্রুপের মত শক্ত প্রতিযোগী থাকা সত্বেও তিনি তার অসাধারণ নেতৃত্বগুণ এবং কর্মদক্ষতায় রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি এনে দিয়েছে।
তার সাফল্য অর্জনের গল্প নিঃসন্দেহে আমাদের মনে অনুপ্রেরণা যোগায়।
আরো দেখুনঃ
- তামিম ইকবাল কত টাকার মালিক
- সাকিব আল হাসান কত টাকার মালিক
- মুশফিকুর রহিম কত টাকার মালিক
- মুকেশ আম্বানি কত টাকার মালিক, কততম ধনী, বাড়ির দাম ও লাইফস্টাইল
- মনোয়ার হোসেন ডিপজল কত টাকার মালিক
- মেসি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য -সর্বকালের সেরা এই খেলয়ার সম্পর্কে জানুন
- জেফ বেজোস কত টাকার মালিক
- ইলন মাস্ক কত টাকার মালিক -মোট সম্পদের বিস্তারিত দেখুন
- যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পার্থক্য !