Facts About Japan

জাপান সম্পর্কে অজানা তথ্য -বছরে ১৫ হাজার ভূমিকম্প

জাপান প্রশান্ত মহাসাগরের একদম পূর্বকোণে ৬৮০০ টি দ্বীপ নিয়ে গড়ে ওঠা ছোট্ট একটি দেশ। কিন্তু এই দেশটি নিয়ে পৃথিবীজুড়ে মানুষের কৌতূহলের সীমা নেই। প্রযুক্তির মাধ্যমে গোটা বিশ্বকে মাতিয়ে রেখেছে জাপানিরা। কিন্তু তাদের সাফল্যের দৌড় কেবল প্রযুক্তির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। শিল্প সাহিত্য চিত্রকলা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের ঈর্ষণীয় বিচরণ। তাই সূর্যোদয়ের দেশ জাপান সম্পর্কে এমনই কিছু গুরুত্বপূর্ণ অজানা তথ্য নিয়ে হাজির হয়েছি আমাদের আজকের পোস্টে।

জাপানি শিশুদের স্কুলে পড়ালেখার পাশাপাশি আদব-কায়দা শেখানোর বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখা হয়ে থাকে। গুরুজনদের সম্মান করা মানুষের সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দেয়া সবাই মিলে কাজ করা ইত্যাদি শিক্ষা একদম ছেলেবেলায় জাপানিদের মনে গেঁথে দেয়া হয়।-Facts About Japan

স্কুলে ছাত্র শিক্ষক নিজেরাই মিলেমিশে একসাথে ক্লাস রুম ক্যাফেটেরিয়া ইত্যাদি পরিষ্কার করেন। কোন কাজকেই ছোট করে না দেখার অভ্যাস এখান থেকেই গড়ে ওঠে জাপানি শিশুদের।

বিশ্বজুড়ে অসম্ভব করিতকর্মা পরিশ্রমী একটি জাতি হিসেবে জাপানিদের দারুন সুনাম রয়েছে। দীর্ঘ কর্মজীবন শেষে অবসরের পরও তারা ঘরে বসে থাকতে পছন্দ করেন না। ঘরের কাজে বাচ্চাদের যত্ন তে এবং বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমে ব্যস্ত সময় কেটে যায় তাদের।

পরিশ্রমের সুফল তাও প্রত্যক্ষ। জাপানের মানুষের চেহারায় বয়সের ছাপ পড়ে কম। শরীর শক্ত পোক্ত থাকে বহু বছর পর্যন্ত। সবচেয়ে দীর্ঘজীবী মানুষের তালিকায় জাপানের অবস্থান তৃতীয়তম। গড়ে প্রায় 83 বছর বাঁচে জাপানিরা। পুরো জীবনটাই কাটে কাজের প্রতি বিপুল উদ্দীপনায় পরিবার সমাজ ও দেশের কল্যাণে।

শৈশবে নৈতিক শিক্ষা দানের অভ্যাসটি দারুন সুফল পেয়েছে জাপান। বড় হয়ে আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠে জাপানি তরুণরা। মানবিক মূল্যবোধ তাদের অসাধারণ। শিক্ষার হার প্রায় শতভাগ। তাই অপরাধের প্রসার ও অসম্ভব কম।

জাপানের রাজধানী টোকিও পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ একটি শহর। ৬ বছরের একটি শিশুও এই শহরে কোনরকম বিপদ-আপদের আশঙ্কা ছাড়াই ইচ্ছামত ঘুরে বেড়াতে পারে নিরাপদে। নির্ধারিত সময়ের পরেও কাজ করার জন্য ওভারটাইম নামে একটি শব্দ প্রচলিত দুনিয়া জুড়ে।

শুধুমাত্র জাপানি রাই এই শব্দটির কোন অর্থ নেই বলে মনে করে। জাপানিরা স্বভাবগতভাবে অফিসের সময়ই শেষ হবার পরেও দীর্ঘ সময় পড়ে থাকে কাজ নিয়ে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার আগে অফিস ত্যাগ করার চিন্তাও করেন না তারা। যত জরুরীই থাকুক না কেন ঘরে ফেরার কাজের প্রতি ভালোবাসা তাদের জন্মগত। ছোটবেলাতেই এই বিষয়টি তাদের খুব ভালোভাবে শিখিয়ে দেয়া হয়েছে।

আমাদের দেশে হঠাৎ একটি ভূমিকম্প হলে সবাই হতো ভঙ্গ হয়ে পড়ে। মানুষ প্রাণ হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে রাস্তায়। মজার বিষয়টি হচ্ছে জাপানে এই বিষয়টি নিয়ে তাদের কোন চিন্তা নেই কোন উদ্দীপনা নেই। যে যেভাবেই থাকুক না কেন ভূমিকম্প হলে তাদের মধ্যে আলাদা কোন ভ্রুক্ষেপ কাজ করে না।

জাপানের প্রতি বছর প্রায় ১৫ হাজার ভূমিকম্প হয়ে থাকে। তাই এটি তাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অংশ হিসেবে ধরা হয়। ভূমিকম্প নিয়ে তাদের আলাদা কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। তাদের বাড়িগুলো সেভাবেই ভূমিকম্প প্রতিরোধ উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে। তাই এত বিপুল পরিমাণ ভূমিকম্পেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তুলনামূলকভাবে খুবই কম।

জাপান পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখানে কাজে এক মিনিট দেরি করে আসাকেও বিরাট অপরাধ হিসেবে দেখা হয়। এখানে সবকিছুই অসম্ভব নিখুঁতভাবে সময় মেনে চলে। সময় নিয়ে তারা এতটাই নিখুঁত যে পাবলিক ট্রেনগুলো ১৮ সেকেন্ড এর বেশি লেট করার কোন ইতিহাস নেই।

জাপানে সামাজিক বন্ধন গুলো খুবই দৃঢ়। বিভিন্ন সমস্যায় সবাই মিলে একত্রে ঝাপিয়ে পড়ে সমাধানে। তাদের সঙ্গবদ্ধতা এবং পেশাদারী তা পুলিশের চেয়ে ঢের বেশি। দেখা যায় দুর্গম সব এলাকায় সরকারি ত্রাণ পৌঁছানোর আগে পৌঁছে গেছে সাধারণ মানুষের ত্রাণ। এভাবেই দুর্যোগ এবং বিপর্যয় গোটা জাতি যখন দুরবস্থায় পড়ে ভালো খারাপের সীমানাটা তখন মুছে যায়। মুখ্য হয়ে ওঠে একমাত্র পরিচয়।”আমরা সবাই জানি আমরা জাপানি ভাইয়ের জন্য আমি সবার আগে প্রাণ দেব”।

তাইতো যুগে যুগে নানান পারমানবিক বোমার আঘাত সহ ভয়াবহ আক্রমণের ধাক্কাও শোয়েও আজ জ্ঞানের কল্যাণে প্রযুক্তিতে সাফল্যের শীর্ষে ছোট্ট এই দেশটি। ইয়ামাহা টয়টা কি ইসুজু হোন্ডা কাওয়াসাকি সুজুকি এগুলো বিখ্যাত গাড়ি নির্মাণ সংস্থা যা সারা বিশ্বেই বিখ্যাত। এগুলো সব জাপানি তৈরি। পৃথিবী বাসির কাছে ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা মিশ্রিত বিস্ময়ের একটি নাম জাপান।

আরো দেখুনঃ 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top