পান্তাভাত এর বিস্তারিত

পান্তাভাত তৈরির প্রক্রিয়া, উপকারিতা, অপকারিতা, উপাদান এবং বিস্তারিত

পুরোপুরি সুস্থ থাকতে আপনি জেনে নিন পান্তা ভাত খাওয়ার উপকারিতা। বর্তমানে অধিকাংশ বাড়িতে গরম ভাত কিংবা নাস্তার প্রচলন রয়েছে। কিন্তু অতীতের সকালবেলা মানে হচ্ছে পান্তা ভাত। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের মানুষের পরিবারে এই ভাতের বিশেষ কদর ছিল। এই ভাতের সাথে একটু লবণ অথবা শুকনো মরিচ, কাঁচা মরিচ অথবা পেঁয়াজ, এছাড়া লেবু অথবা লেবু পাতার রস আচারের সাথে পান্তাভাতের স্বাদ যেন কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এখনো গ্রাম অঞ্চলে পান্তাভাতের প্রচলন রয়েছে। তবে শহরাঞ্চলে পান্তাভাতের প্রচলন নেই বললেই চলে। অথচ নানান পুষ্টিগুণে ভরপুর এই পান্তা ভাত। চিকিৎসকরা বলেছেন জীবনের যাবতীয় শক্তি নাকি এই পান্তাভাতের রয়েছে।

পান্তাভাতের ইংরেজী কি?

পান্তাভাতের ইংরেজি সরাসরি Fermented Rice

কারন পান্তা শব্দের ইংরেজি অর্থ হলো Fermented যার বাংলা অর্থ হলো গাজানো। আর ইংরেজি ডিকশনারী অনুযায়ী পান্তাভাতের পরিচয় সম্পর্কে বলা হয়েছে “A night old fermented rice”. বাংলায় এর বিভিন্ন নাম রয়েছে, যেমনঃ মারভাত, পাখালা, পাখালো, এছাড়া চিনে এটি পরিচিত “জিয়ান ইয়াং” নামে। তবে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত পান্তাভাত নামেই।

পান্তাভাত তৈরির প্রক্রিয়া

পান্তা ভাত খেয়ে শরীর চর্চা না করে ও বলিষ্ঠ শরীরের অধিকারী হওয়া যায় এবং সুন্দর ত্বক এবং চুল এর মালিক হওয়া যায়। ভাতে পানি দিয়ে রাখলে বিভিন্ন গাজনকারি (Fermentation) ব্যাক্টেরিয়া (Bacteria) বা ইস্ট (Yeast) শর্করা ভেঙ্গে ইথানল ও ল্যাকটিক এসিড তৈরি করে। এই ইথানলই পান্তাভাতের ভিন্ন রকম স্বাদের জন্য দায়ী। পান্তা ভাত মূলত ভাত সংরক্ষণের একটি পদ্ধতি। পানি দিয়ে রাখলে গাজনকারি ব্যাক্টেরিয়া সেখানে ল্যাকটিক এসিড তৈরি করে যার ফলে পান্তা ভাতের অম্লত্ব বেড়ে যায় (pH কমে)। তখন পচনকারি ও অন্যান্য ক্ষতিকারক ব্যাক্টেরিয়া, ছত্রাক ভাত নষ্ট করতে পারে না।

  • ১২ ঘণ্টা পরে পান্তা ভাত তৈরী হয়।
  • কোন প্রকার সংক্রমন এড়াতে খাবারের পাত্রটি সতর্কতার সংগে ঢেকে রাখতে হবে।
  • ভাত বেশিক্ষণ রেখে দিলে তা পচে খাবার অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
  • পানির কারণে ভাতের এই ফারমেন্টেশন বা গাজন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়।
  • সকাল বেলা পান্তাভাত লবণ, লেবু, মরিচ এবং কাটা পেঁয়াজ দিয়ে খাওয়া হয়।
  • খাওয়ার সময় পানি আলাদা করা হয় অনেকসময়।
  • অনেকে পান্তাভাতের সঙ্গে ভোজ্য তেল ব্যবহার করে।

পান্তাভাতে কি কি উপাদান রয়েছে

সম্প্রতি ভারতের আসাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষক পরীক্ষা করে দেখেছেন 12 ঘন্টা ভিজিয়ে রাখলে একশো গ্রাম পান্তা ভাতে 73.91 3 মিলিগ্রাম আরন তৈরি হয় সেখানে সমপরিমাণ গরম ভাতে আয়রন থাকে মাত্র ৩.৪ মিলিগ্রাম। এছাড়া 100 গ্রাম পান্তাভাতে পটাশিয়াম বেড়ে হয় 839 মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম বেড়ে দাঁড়ায় 850 মিলিগ্রাম। যেখানে সমপরিমাণ গরম ভাতে ক্যালসিয়াম তাকে মাত্র 21 মিলিগ্রাম।

এছাড়া পান্তাভাতে সোডিয়ামের পরিমাণ কমে হয় 303 মিলিগ্রাম সেখানে গরম ভাতে সোডিয়ামের পরিমাণ 475 মিলি গ্রাম। গবেষণায় দেখা গেছে পান্তা ভাতে নানা ধরনের মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট বা পুষ্টিকর খনিজ পদার্থ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, জিংক, ফসফরাস, ভিটামিন বি ইত্যাদি।

পান্তাভাতের উপকারিতা

আমেরিকার নিউট্রিশন এসোসিয়েশন-এর এক গবেষণায় বলা হয়েছে ভাত পানিতে ভিজিয়ে রাখলে পাকস্থলীতে বেশকিছু এনজাইমের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি হয়ে যায়। ফলে পান্তাভাতের জটিল শর্করা গুলো খুব সহজেই হজম হয়ে যায়। এছাড়া পান্তা ভাতে ভিটামিন b6 এবং বি টুয়েলভ এর ভালো উৎস। এছাড়া দেহের বহু উপকারী ব্যাকটেরিয়া পান্তা ভাতে তৈরি হয়।

  • পান্তা ভাতে থাকা পুষ্টিকর পদার্থগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটিকে শক্তিশালী করে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় সাহায্য করে পান্তাভাত।
  • দেহের রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে আয়রন যেটা পান্তা ভাতে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।
  • শরীরে হাড়গুলোকে শক্ত রাখে ক্যালসিয়াম। শরীরে নিঃসৃত এনজাইমকে সক্রিয় করতে সাহায্য করে ম্যাগনেসিয়াম। যেটা পান্তাভাতে পাওয়া যায়।
  • পান্তা ভাতে প্রচুর পরিমাণে বিটা-সিটোস্টেরল, কেম্পেস্টেরোলের মতো মেটাবলাইটস রয়েছে যা শরীরকে প্রদাহ বা যন্ত্রণা থেকে রক্ষা করে।
  • পান্তাভাত কোলেস্টোরেল কমাতেও এসব সাহায্য করে।
  • পান্তা ভাতে রয়েছে আইসোরহ্যামনেটিন-সেভেন-গ্লুকোসাইড ফ্ল্যাভোনয়েডের মতো মেটাবলাইটস যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
  • পান্তা ভাতে ল্যাকটিক এসিড ব্যাকটেরিয়া রয়েছে যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। সাধারণত দই-এর মধ্যে এই ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়।
  • এছাড়াও গরমের সময় পান্তা ভাত শরীরকে ঠাণ্ডা রাখে।

পান্তাভাত এর অপকারিতা

  • ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ভাতের ফারমেন্টেশন হলে সেখানে অ্যালকোহলের উপাদান তৈরি হয় এবং সেই পান্তা ভাত খাওয়ার পর শরীর ম্যাজ ম্যাজ করে ও ঘুম পেতে পারে।
  • লম্বা সময় পানিতে ভিজিয়ে রাখলে পান্তাভাতে কলিফর্ম (Coliform) নামক ব্যাকটেরিয়া উৎপন্ন হয়ে যেটা খেলে মানুষের ডাইরিয়া বা ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে কিছুটা।
  • যারা সেনসেটিভ কাজের সাথে সমপৃক্ত যেমন গাড়ি চালানো তাদের জন্য না খাওয়াই ভালো, কারণ এটি খেলে হালকা ঘুমের ভাব বা ঝিমুনি অনুভূত হয়ে থাকে।

শেষ কথাঃ
আশা করি আমাদের আজকের পোস্ট থেকে আপনারা পান্তাভাত সম্পর্কে যাবতীয় ধারণা পেয়ে গেছেন। আমরা চেস্টা করেছি আপনাদের জন্য আপডেট সব তথ্য উপস্থাপন করার জন্য। এ বিষয়ে যদি আপনাদের আরো কিছু জানার থাকে বা কোন মতামত থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে আমাদের জানাবেন। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

আরো দেখুনঃ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top